সাকিব আল হাসানকে রেখেই পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের জন্য দল ঘোষণা করেছেন নির্বাচকরা। ভেঙে দেওয়া সংসদের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন সাকিব। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাননি বলে অনেক বিরূপ মন্তব্যের শিকার হতে হয় তারুণ্যের এই আইকনকে।
পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটো টেস্ট খেলতে আজ দেশ ছাড়বেন ক্রিকেটাররা। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অন্তর্ভুক্ত দুই টেস্টের প্রথমটি ২১ আগস্ট শুরু হবে রাওয়ালপিন্ডিতে, দ্বিতীয়টি করাচিতে। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের প্রথম গন্তব্য লাহোর। সেখানে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে ১৪-১৬ আগস্ট অনুশীলন করবে বাংলাদেশ দল, এরপর রওনা হবে ইসলামাবাদে। সেখানে ‘এ’ দলের খেলোয়াড়দের ভেতর টেস্ট দলে যারা ডাক পেয়েছেন, তারা যোগ দেবেন। সর্বশেষ কানাডায় গ্লোবাল টি-২০ লিগ খেলা সাকিব যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাকিস্তান যাচ্ছেন।
বাংলাদেশ দল সবশেষ টেস্ট খেলেছিল চট্টগ্রামে, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই টেস্টের স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন শাহাদাত হোসেন দীপু। ফিরেছেন আঙুলের চোটে খেলতে না পারা মুশফিকুর রহিম। দল নির্বাচন প্রসঙ্গে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, ‘আমরা এই সংস্করণের সেরা দলটাই বেছে নেওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছি। দলটায় চমৎকার ভারসাম্য আছে। মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান; তাদের সম্মিলিত টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা ২১৬, এ ধরনের অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প হয় না। তাইজুল ইসলাম এবং মেহেদী হাসান মিরাজ দীর্ঘদিন ধরে স্পিন বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে এবং তারা একত্রে সাড়ে তিনশ উইকেট নিয়েছে। আমরা একই সঙ্গে আশা করছি নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাসের মতো ব্যাটসম্যানরাও জ¦লে উঠবে। কারণ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়ে উঠতে হলে আমাদের দলগত প্রচেষ্টা লাগবে।’
প্রায় এক বছর পর টেস্ট দলে ফিরেছেন তাসকিন আহমেদ। মাঝের সময়টায় টেস্ট থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তের কথা জানালেও সম্প্রতি লাল বলের খেলায় ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন এই পেসার। তবে তার আগে ‘এ’ দলের হয়ে খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে তাকে। তাসকিন দলে ফিরলেও খেলবেন শুধু দ্বিতীয় টেস্টে, জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচক, ‘আমরা পাঁচজন পেসার নিয়েছি। কারণ আমাদের মাথায় রাখতে হয়েছে যে তাসকিন কেবলমাত্র দ্বিতীয় টেস্টই খেলবে। তাসকিন গত বছরের জুনের পর টেস্ট ক্রিকেট খেলেনি, তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি “এ” দলের হয়ে পাকিস্তান “এ” দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় চার দিনের ম্যাচটায় তাকে সুযোগ দেওয়ার, যাতে করে সে বড় দৈর্ঘ্যরে ম্যাচের ছন্দ ফিরে পায়। এর বাইরেও কয়েকজন পেসার হয়তো “এ” দলের হয়ে ওয়ানডে সিরিজে যোগ দেবে। এ জন্য আমাদের বিকল্পও ভাবতে হবে। আমাদের পেস বোলিং বিভাগে বৈচিত্র্য আছে, এমন সব বোলার আছে যারা জোরে বল করতে পারে এবং বল সুইং করাতে পারে। আমরা বিশ্বমানের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে তারা কেমন করে, সেটা দেখার জন্য মুখিয়ে আছি।’
পাকিস্তানে ‘এ’ দল এবং টেস্ট দল মিলিয়ে একই সঙ্গে বেশ কিছু ক্রিকেটার যাচ্ছেন। সফরটা থেকে লিপুর প্রত্যাশা, অভিজ্ঞতার সঙ্গে যেন প্রাপ্তিও থাকে, ‘পাকিস্তান খুবই শক্ত প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে তাদের নিজেদের মাঠে। সফরটা তাই চ্যালেঞ্জিং হবে। লাহোরে আমরা প্রস্তুতির জন্য বাড়তি সময় পাচ্ছি, যেটা খুবই কাজে লাগবে। এ ছাড়া যারা “এ” দলের হয়ে এরই মধ্যে পাকিস্তানে আছে তারাও অভিজ্ঞতা নিয়ে দলের সঙ্গে যোগ দেবে। এই কন্ডিশনে তাদের অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগবে।’
দেশে কিংবা বিদেশে, পাকিস্তানকে কখনো টেস্টে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ১৩ টেস্টে ১২ হার, একটিই ড্র; খুলনায়। ২০০৩ সালে মুলতানে জয়ের খুব কাছে গিয়েও ১ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে রাওয়ালপিন্ডিতে সবশেষ টেস্ট খেলেছিল বাংলাদেশ, যা পাকিস্তানের মাটিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সবশেষ টেস্ট। সেই ম্যাচে ইনিংস এবং ৪৪ রানে হেরেছিল মুমিনুল হকের নেতৃত্বে যাওয়া বাংলাদেশ দল।