আমরা আন্দোলনে সরাসরি জড়িত নই, নৈতিক সমর্থন রয়েছে: মির্জা ফখরুল

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি সরাসরি জড়িত নয়। তবে এই আন্দোলনে তাঁদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। সেই সমর্থন তাঁরা দিয়ে যাবেন।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে বুধবার জোহরের নামাজের পর গতকালের সংঘর্ষে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজা শেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসংগত বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব দ্ব্যর্থ কণ্ঠে বলতে চাই, এই আন্দোলনের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা সরাসরি জড়িত। আমরা এই আন্দোলনের সঙ্গে কখনোই সরাসরি জড়িত নই। আমরা তাদের নৈতিক সমর্থন দিয়েছি। সেই সমর্থন আমরা দিয়েই যাব।’

এ সময় মির্জা ফখরুল বিএনপি আয়োজিত গায়েবানা জানাজায় পুলিশের বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে এখানে এসেছিলাম। আপনারা দেখেছেন, কীভাবে এই মসজিদেও গেট বন্ধ করে দিয়ে জানাজায় বাধা প্রদান করেছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

এ প্রসঙ্গে গতকাল মধ্যরাতে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অভিযানের ঘটনা উল্লেখ করে এটাকে ‘সাজানো নাটক’ বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আগের মতো সম্পূর্ণ নাটক সাজিয়ে বিএনপির কার্যালয়ে কতগুলো ককটেল, বোমা, লাঠিসোঁটা রেখে দিয়ে সেখানে তারা ছবি তুলে আবার বিএনপিকে দোষারোপ করার চেষ্টা করছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে বুধবার জোহরের নামাজের পর গতকালের সংঘর্ষে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাছবি: খালেদ সরকার

সরকার গত কয়েক দিন ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং দলীয় সন্ত্রাসী দিয়ে দেশে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, চট্টগ্রাম, খুলনা, রংপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় গুলি, সন্ত্রাস, নির্যাতন করে ছাত্রদের আন্দোলন বন্ধ করার চেষ্টা চালানো হয়। এর ফলে ছয়টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়।

রংপুরে সংঘর্ষে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদের কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন, সাঈদকে কীভাবে সরাসরি গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এ রকম ভয়াবহ ঘটনা আমরা জীবনে কখনো দেখিনি। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, এ ধরনের দমননীতি, এ ধরনের হত্যা, গুম করে সরকার আজকে জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্রদের একটা ন্যায়সংগত দাবি সরকার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শেষ করতে পারত। শুধু ‘জেদের কারণে’ আজকে তারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘পাকিস্তান আমলেও শাসকগোষ্ঠী এভাবে আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করেছে; কিন্তু পারেনি। একইভাবে আজকে তারা যেভাবে দমনের চেষ্টা করেছে, সেটার সঙ্গে আমরা কোনোমতেই একমত নই। আমরা এটার ঘৃণা, নিন্দা জানাচ্ছি। প্রতিবাদ করছি। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।’

এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান, বরকত উল্লা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *