পাসপোর্টে ইসরাইলকে ফের নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের

অন্তর্বর্তী সরকারকে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি ফের মুদ্রিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।

একই সঙ্গে ইসরাইল থেকে অবৈধভাবে কেনা আড়িপাতা সফটওয়্যার ‘পেগাসাস’ এর ব্যবহার বন্ধেও সরকারকে ঘোষণা দিতে বলেছে দলটি।

শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ফিলিস্তিনের পক্ষে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ আয়োজিত এক বিক্ষোভ পরবর্তী সমাবেশ থেকে এ দাবি জানান দলের রাজনৈতিক প্রধান মো. আনিছুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ১৯ জানুয়ারি গাজা যুদ্ধ বিরতি চুক্তি হয়। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ১৭৮জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। এখন গাজাকে দখল করে অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইলের অন্তর্ভুক্ত করার পাঁয়তারা চলছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের মুসলমানদের ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে হবে। এর অংশ হিসেবে এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি পুনর্বহাল করে বার্তা দিতে হবে।

তিনি আরও বলেন, গাজাকে দখল করতে সেখানকার ফিলিস্তিনি জনগণকে মিশর, জর্ডান ও সৌদি আরবে বিতাড়নের কথা বলছে। এটি স্পষ্টভাবে গাজাবাসীকে জাতিগত নিধনের পদক্ষেপ। সমগ্র বিশ্ববাসীকে আমেরিকা ও ইসরাইলের এই জাতিগত নিধন পরিকল্পনা রুখে দিতে হবে।

সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, আমরা এক নিষ্ঠুর নির্দয় ভারতীয় দালাল শেখ হাসিনার অধীনে ছিলাম, তার পতনের আগ পর্যন্ত এখানকার মুসলমানরা মুখ ফুটে কথা বলতে ভয় পেত। মানুষ দাড়ি টুপি নিয়ে বাইরে যেতে ভয় পেত, মসজিদে যেতে চিন্তা করত আমাকে জঙ্গি বলে কিনা। সেই ভয় এখন কেটে গেছে। দুই হাজারের অধিক মানুষ জীবন দিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে, কিন্তু আমাদের স্বপ্ন এখনো পূরণ হয়নি। আমাদের পাসপোর্টের এক্সেপ্ট ইসরাইল লেখা এখনো পুনর্বহাল হয়নি। শেখ হাসিনা ভারত ও ইসরাইলের দালাল ছিল বলে পাসপোর্ট থেকে এক্সেপ্ট ইসরাইল অর্থাৎ ইসরাইল ভ্রমণ নিষিদ্ধ কথাটা তুলে দিয়েছিল।

তিনি বলেন, আজকে অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় পৃথিবীর মধ্যে শক্তিশালী একজন মানুষ ড. মুহাম্মদ ইউনূস আমাদের দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা আশায় বুক বেঁধেছি, আমরা শেখ হাসিনার সেই দুর্বৃত্ত, ভারতীয় আধিপত্যবাদের শাসন থেকে মুক্ত হব এবং ড. ইউনূস আমাদের হারানো গৌরব, হারানো অধিকার ফিরিয়ে দেবেন। এখন পর্যন্ত আমরা পাসপোর্টে এক্সেপ্ট ইসরাইল ফেরত পাইনি, আমার পাসপোর্ট সংশোধন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার জন্য ইসরাইলের স্পাই ম্যালওয়্যার পেগাসাস কিনেছিল। এখনো পর্যন্ত এটি বন্ধ হওয়ার কোনো ঘোষণা আসেনি। আমরা জানি না এখনো আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদ কিনা, কিংবা শেখ হাসিনার ছেলে জয় আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বিক্রি করে যে ২০ হাজার কোটি টাকা ইনকাম করেছে তার প্রতি বিচার কি হলো। জায়নবাদী ইহুদীরা যেকোন সময় এসব তথ্য ব্যবহার করে আমাদের ক্ষতিসাধন করতে পারে। ড. ইউনূসকে জানাতে হবে এসব তথ্যের বিষয়ে তিনি কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।

যুগ্ম-আহবায়ক সাইয়েদ কুতুব তার বক্তব্যে বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে আরব-আমেরিকান ভোটারদের বলেছিলেন তাকে নির্বাচিত করলে তিনি গাজা যুদ্ধ বন্ধ করবেন। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর এখন ট্রাম্প ফিলিস্তিনিদের তাড়িয়ে দিয়ে গাজাকে দখল করার নীলনকশা করেছেন। কিন্তু ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে সরানো যাবে না। তারা সেখানেই থাকবেন এবং ফিলিস্তিন স্বাধীন হবে ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিপ্লবী পরিদের সদস্য সচিব হাসান মোহাম্মদ আরিফ, সহকারী সদস্য সচিব আবদুস সালাম ও সৌরভ শাকিল, কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য তৌহিদ তপু, ওয়াসিম আহমেদ, রাজু আহমেদ ও নাহিদ রানা, বিপ্লবী ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক আবদুল ওয়াহেদ, যুগ্ম-আহ্বায়ক ইয়ামিন সরকার ও নেছার আহমেদ তুহিন, সহকারী সদস্য সচিব এস এম রাফসানযানি, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আশরাফুল ইসলাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ইসতিয়াক আহমেদ ইফাত ও সিহাব-উল হক প্রমুখ।

এর আগে বাদ জুমা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেট থেকে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের নেতাকর্মীরা। মিছিলের ব্যানারে বাংলা, ইংরেজি ও আরবিতে লেখা ছিল ‘ট্রাম্পের গাজা দখল থামাও, জাতিগত নিধন যুদ্ধাপরাধ’। বিক্ষোভকালে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *